শিশুর খাদ্যাভ্যাসে পিতা-মাতার ভূমিকা

একজন পিতামাতা হিসেবে আপনার সন্তানকে কিভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসে গঠন করবেন? সন্তানের জন্য ইতিবাচক খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করার কোন দরকার আছে কি! খাবার গ্রহণে সন্তানের রোল মডেল হবেন কিভাবে?

শিশুর খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য তালিকা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  তাই একজন সচেতন পিতামাতার কিছু বিষয়  জেনে রাখা প্রয়োজন  যাতে তারা তাদের সন্তানের খাদ্যাভ্যাস গঠনে  ভূমিকা পালন করতে  পারে। তাছাড়া শিশুর খাদ্যাভ্যাসে পিতামাতার ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ পারিবারিক পরিবেশ শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলিকে প্রভাবান্বিত করে।  পিতামাতা শিশুর জন্য খাদ্য তালিকা প্রস্তুত থেকে শুরু করে খাদ্য গ্রহণের সময়সূচি ও পরিমাণ সব কিছুই নির্ধারণ করে থাকে। তাই পিতামাতার  জানা থকা উচিত যে কোন খাবার কি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ যাতে তারা অধিক খাদ্য গ্রহণের ফলে স্থুলকায় না হয়ে পরে আবার প্রয়োজনীয় খাদ্য বাদ পরার কারণে পুষ্টিহীনতায় না ভুগে।  

শৈশবের খাদ্যাভ্যাস পরবর্তী জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেটি গঠনে পিতামার ভুমিকাই প্রধান। পরিবারের খাদ্যাভ্যাস,  খাদ্য গ্রহণের পরিবেশ, খাদ্য গ্রহণের সময় ও তালিকা এ সব কিছুই পরিবার প্রধান হিসাবে পিতা মাতা করে থাকেন।  এজন্য নিয়মিত সঠিক খাদ্য গ্রহণে পিতামাতাকেই সচেতন হতে হবে। 

আর আমাদের এই গবেষণা ভিত্তিক লেখনিটি সে সকল সচেতন পিতামাতাদের জন্য যারা শৈশব থেকে তাদের সন্তানের খাদ্যাভ্যাস ও সুস্বাস্থ্যের কথা ভাবে। আমরা আশা করি এই লিখনিটি আপনাদেরকে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করবে আপনার সন্তানের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠনে।

 

ইতিবাচক খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা

পারিবারিক খাবারগুলো সাধারণত ঘরে বসেই খাওয়া হয়। এই খাওয়ার পরিবেশটি আপনার বাচ্চাদের খাওয়ার অভ্যাসে প্রভাব ফেলতে পারে। খাদ্যের প্রতি শৈশবের ইতিবাচক ধারণা পরবর্তী সময়ে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে । কীভাবে খাদ্য গ্রহণের ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলা যায় তা জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

 

নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া

প্রতিদিন নিয়মিত সঠিক সময়য়ে ভারি ও হাল্কা খাবার গ্রহণ গড়ে তুলতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের সময়সূচী । আপনার সন্তান যদি তাদের খেয়াল খুশি মতো যেখানে ইচ্ছা সেখানে খাবার গ্রহণ করে তবে তারা খাওয়ার সময়ে ক্ষুধা অনুভব করবে না , ফলে তাদের খাদ্যাভ্যাস নষ্ট হয়ে যাবে এমনকি কিছু কিছু সময় এটা অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণ হয়ে দাঁড়াবে । 

 

পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খাওয়া

গবেষণায় দেখা গেছে যে সব বাচ্চারা তাদের পরিবারের সাথে একত্রে খাবার গ্রহণ করে তারা তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, শস্যদানা ইত্যাদি গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তোলে । এজন্য তাদের অতিরিক্ত ওজন হওয়ার ঝুঁকি কম এবং তারা অধিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় । যদিও যে সব বাচ্চারা টেলিভিশন দেখে দেখে খাবার খায় তাদের খাদ্য তালিকায় তুলনামূলক ভাবে কম স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই করার প্রবণতা লক্ষ করা যায় । কারণ তারা খাবার গ্রহণের সময় খাবারের চেয়ে টিভি দেখায় বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে । তাই টেলিভিশনের সামনে বসে খাওয়া এবং খাওয়ানো বর্জন করা উচিৎ কারণ টিভি দেখার কারণে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে যা শিশুর ওজন বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই  বাড়িয়ে দেয় । 

 

আপনার বাচ্চাদের খাবার খেতে চাপ প্রয়োগ করবেন না

আপনার সন্তানকে খাবার গ্রহনে জোর করবেন না । অধিকাংশ বাবা-মা সন্তানের সাস্থের কথা ভেবে খাদ্য গ্রহণে জোর করে থাকেন । এর ফলে অধিক খাদ্য গ্রহনের সম্ভাবনা থাকে । তাই আপানার সন্তানকে তার চাহিদা ও ক্ষুধা আনুযায় খাবার গ্রহণ করতে দিন । 

 

পুরষ্কার বা শাস্তি হিসাবে খাবার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন

খাবারকে পুরস্কার অথবা শাস্তি হিসাবে উপস্থাপন করা উচিৎ নয় , এর ফলে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহনের প্রতি শিশুর  আকর্ষণ বেরে যেতে পারে । খাদ্য হচ্ছে শরীরের পুষ্টি সরবরাহের মাধ্যম তাই একে পুরষ্কার অথবা শাস্তি হিসাবে উপস্থাপন না করে আপানার সন্তানকে ভিন্ন ভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই করার সুযোগ দিন ।

 

ঘরেই স্বাস্থ্যকর খাবার খান

দোকান থেকে খাবার ক্রয় করার পূর্বে তা স্বাস্থ্যকর কি না তা নিশ্চিত করুন । তাছাড়া আপনার বাসায় প্রস্তুতকৃত ও সংরক্ষিত খাবারগুলোর যা আপনার সন্তান নিয়মিত খেয়ে থাকে তার গুণগত মান ও পুষ্টি উপাদান পর্যবেক্ষণে রাখুন । সুষম ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে আপনার পরিবারে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করুন যাতে আপনার শিশুর সকল প্রকার খাবার গ্রহনের অভ্যাস গড়ে ওঠে ।

 

সন্তানের কাছে ইতিবাচক রোল মডেল হওয়া

পিতা-মাতা সন্তানের জন্য সাস্থকর খাদ্য গ্রহনের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে পারে কারণ খাদ্য বাছাইকরনে বাবা-মার ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আপনি আপানর সন্তানের কাছে যেভাবে আদর্শ হয়ে উঠতে পারেন –

 

নিজের পছন্দমতো স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করুন

আপনি যা খান তা আপনার সন্তানের জন্য একটা উদাহরনস্বরূপ । আপনি যা খাবেন তারা ঐসব খাদ্যই খেতে আগ্রহী হবে । তাই পিতা-মাতার উচিৎ প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফল, শাকসবজি, শস্যদানা, স্বল্প স্নাহযুক্ত দুগ্ধজাতিও খাবার,  শিমজাতিও খাবার, ডিম ও মাছ রাখা উচিৎ । 

 

ক্যালোরি, চর্বি, চিনি এবং লবণ এর পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখুন

অতিরিক্ত চর্বি, লবণ, ক্যালরি ও চিনি জাতীয় খাবার যেমন কেক, চোকলেট, আইসক্রিম, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলু চিপস, স্পোর্ট ও এবং এনার্জি ড্রিংকস  এবং মিষ্টিজাতীয় ঠাণ্ডা ও গরম পানিও সচরাচর গ্রহণ করা যাবে না এবং কম খেতে হবে । আপনি যখন এই খাবারগুলো কম খাবেন তখন আপনার সন্তানও এই খাবারগূলোও কম খাবে । তাদের এই খাবাড়গুলোকে খারাপ বলে পরিচয় করানোর দরকার নেই বরং তাদেরকে এই সব খাবার প্রয়াসী না খাওয়া ভাল তা বোঝাতে হবে ।

 

পিতামাতা হিসাবে, আপনার বাচ্চাদের খাওয়ার অভ্যাস গঠনে আপনারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি ইতিবাচক খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করে এবং একজন সত্যিকারের রোল মডেল হয়ে আপনি আপনার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারেন যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর স্থায়ী এবং কার্যকর প্রভাব ফেলবে।

Default user image

মোঃ মঈন উদ্দিন আহমেদ, লেখক, আস্থা লাইফ

পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং সেখান থেকেই স্নাতন পাশ করি। বর্তমানে এম.বি.এ. তে অধ্যায়নরত। লিখালিখি শুরু হয় প্রথম বর্ষ থেকেই তবে তা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যবসা অনুষদের কলেজ সমুহের এবং ব্যবসা সম্পর্কিত। পরবর্তীতে নতুন কিছু করা এবং বাংলা লিখনের চর্চার সুযোগ হিসাবে আস্থা পরিবারে যোগদান। এতে আমি যেমন বাংলা লিখনের চার্চা করে বাংলায় দক্ষতা বাড়াতে পারব তেমনি আমার লিখনি হয়তো অনেক মানুষের উপকারে আসবে। মানুষকে সচেতন করে একটি সুস্থ ও সম্বৃদ্ধ জীবন যাপন করতে সহায়তা করবে৷ যা আমাকে মানসিক তৃপ্তি প্রদান করবে।

Related Articles