মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার কারণ ও বাড়ানোর সহজ উপায়

মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বাচ্চাকে সময়মতো না খাওয়ানো, পানি কম পান করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, বাচ্চা জন্মের পরপরই জন্মনিরোধক বড়ি সেবন শুরু করা ইত্যাদি। এসব সমস্যা দূর করার জন্য মাকে পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে, বাচ্চাকে সময়মতো খাবার দিতে হবে, প্যাকেটের দুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

সদ্যজাত শিশুর জন্য একমাত্র উপকারী খাদ্য হলো তার মায়ের বুকের দুধ। একটি বাচ্চার শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর ওজন, সুস্থ্যতা, বুদ্ধির বিকাশসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। তবে অনেক সময় বাচ্চা তার চাহিদা অনুযায়ী দুধ পায়না। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, ১০-১৫% সদ্য মা হওয়া নারীর দুধ উৎপাদনের হার কম থাকে। ফলে বাচ্চার চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। আজকের আর্টিকেলে আমরা এই সমস্যার সম্ভাব্য কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার কারণ 

মায়ের বুকের দুধ কমে যাওয়ার জন্য এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। কখনো কখনো বুকের দুধ কমে যাওয়ার কোনো দৃশ্যত কারণ থাকেও না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নিচে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো যার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ কমে যেতে পারে:

  • দুগ্ধগ্রন্থি বা Mammary Glands যদি কোনো কারণে সঠিকভাবে বিন্যস্ত না থাকে তাহলে এই সূক্ষ্ণ নালী গুলোর মধ্যে দিয়ে দুগ্ধপ্রবাহ ব্যাহত হয়, ফলে শিশু দুধ কম পায়।

  • অনেক সময় বাচ্চার রিফ্লেক্স মেকানিজম ভালোমতো কাজ করেনা, ফলে সে তার প্রয়োজনীয় খাবারটুকু ঠোঁট দিয়ে চুষে নিতে পারেনা। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ থাকা সত্বেও বাচ্চার খাদ্যঘাটতি থেকে যায়।

  • জন্মনিরোধক বড়ি সেবন করার কারণেও অনেক সময় বুকের দুধ কমে যায়। এজন্য বাচ্চা জন্মের পর অন্তত ছয় সপ্তাহ পর এসব বড়ি সেবন শুরু করা উচিত, এবং শুধু মিনি-পিল সেবন করা উচিত। এছাড়া অন্য ওষুধের কারণেও বুকের দুধ কমে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা থাকলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

  • মা যদি কোনো কারণে ক্লান্ত বা চিন্তিত থাকেন তাহলেও বুকের দুধ কমে যায়। এজন্য মাকেও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খেতে হবে, ঘুমাতে হবে সময় মতো এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করলে বুকের দুধ এর তারল্য কমে যায়, তখন বাচ্চা দুধ কম পায়। এছাড়াও পানি কম পান করলে মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শুরু হতে পারে।

  • বাচ্চাকে সময়মত এবং ঘন ঘন বুকের দুধ না খাওয়ালে মায়ের শরীরে দুধ উৎপাদন কমে যায়। ফলে বাচ্চা খাওয়ার সময় পর্যাপ্ত দুধ পায়না।

মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায়

মায়েরা তাদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য শুরুতেই ঘরোয়া ভাবে কিছু উপায় অবলম্বন করে দেখতে পারেন। তবে, বুকের দুধ কমে যাওয়ার কারণটা উদ্ঘাটন করতে পারলে বিষয়টি আরো সহজ হয়ে যায়। নিচে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কিছু সাধারণ উপায় বর্ণনা করা হলো:

বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ান

প্যাকেটের গুঁড়ো দুধ বাচ্চাকে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, অন্তত প্রথম ছয় মাস। বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা যখন দুধ পান করার জন্য বুকের দুধ চুষতে শুরু করে তখন মায়ের মস্তিষ্কে নার্ভ এর মাধ্যমে সিগন্যাল যায়। ফলে ব্রেইন ফিমেল হরমোন তৈরীর কমান্ড দেয়, যা বুকের দুধ তৈরী এবং সরবরাহের জন্য প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া প্রথম ছয় মাসেই ভালোমতো তৈরী হয়ে যায়। যার কারণে পরে বাচ্চা দুধ পান করা কমিয়ে দিলেও বুকের দুধ কমে যায়না।

বাচ্চাকে বার বার বুকের দুধ খাওয়ান

বাচ্চাকে বার বার খাওয়াবেন, যতবার এবং যতক্ষণ বাচ্চা চায় ততোবার, ততোক্ষণই তাকে খাওয়াবেন। মনে রাখবেন, বাচ্চা যত বেশি বুকের দুধ খায়, শরীরে দুধ উৎপাদন এবং দুধের সঠিক প্রবাহ ততোই সহজ হয়। এজন্য সবসময় বাচ্চাকে ধীরেসুস্থে খাওয়াবেন, কখনো তাড়াহুড়ো করবেন না।

উভয় স্তন থেকেই দুধ পান করান

যখন বাচ্চাকে খাওয়াবেন তখন পালা করে উভয় স্তন থেকেই দুধ পান করাবেন। অনেক সময় এক স্তন থেকে বেশি পরিমানে খাওয়ানোর কারণে অন্য স্তনে দুগ্ধপ্রবাহ কমে যায়।

নিজে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন

বেশি বেশি বুকের দুধ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। মাকে যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন, আয়রন ও অন্যান্য মিনারেল এর ঘাটতি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন

বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা আবশ্যক। পানি পরিমাণ মতো পান করলে দুধের তারল্য ঠিক থাকবে, ফলে বাচ্চারও পানির চাহিদা পূরণ হবে।

দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন

দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। শারীরিকভাবে আপনি যদি সুস্থ থাকেন, তাহলে বুকের দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া ঠিক থাকবে।

উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আয়রন সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে। সার্বিকভাবে মা যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন তাহলে বুকের দুধ উৎপাদনের মাত্রা সঠিক থাকে।

Default user image

মেঘলা, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি মেঘলা। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছি। ভালো লাগে পাহাড় আর ঝর্ণায় ঘুরতে। পছন্দের কাজ বাগান করা আর বিভিন্ন রেয়ার গোলাপ সংগ্রহ করা। বই পড়ার শখ থেকেই লেখালেখির শুরু। আস্থা লাইফের হেলথ ব্লগগুলো লিখতে ভালো লাগে, পাঠকদের সচেতন করার পাশাপশি নিজেও অনেক নতুন কিছু জানতে পারি।

Related Articles