মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যাথা! এন্ডোমেট্রিওসিস নয়তো?

কখনো তলপেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করছেন, বিশেষ করে মাসিকের সময়? আবার পিরিয়ড কালিন সময়ে প্রস্রাব-পায়খানায় তীব্র ব্যাথা হয়? একি অসহনীয় ব্যথা থাকে যৌনমিলনে? যদি উত্তর হ্যা, তবে ক্যান্সার ও বন্ধ্যাত্ব রোধে এখনি সচেতন হোন। কিন্তু কিভাবে?

১৭ বছরের শ্রেয়সী রোজকার দিনে ভালো থাকলেও, ঝামেলা বাঁধে তার পিরিয়ড এর দিন গুলোতে!  অসম্ভব তলপেটের ব্যথায় কুঁকড়ে থাকে মেয়েটি!  কোনভাবেই এই যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পায় না শ্রেয়সী! গরম পানির সেঁক, পেইন কিলার কোন কিছু খেয়েই ব্যথা কমাতে পারেনা সে। 

আবার এদিকে, রুমেলা ঝামেলা পোহায় অন্যদিকে। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তার মলমূত্র ত্যাগ করার সময় অসহনীয় ব্যথা হতো। তার বিয়ের পর, সে খেয়াল করলো শারীরিক মিলনেও রুমেলা অসম্ভব ব্যথা অনুভব করে! যন্ত্রণাদায়ক শারীরিক সম্পর্কের কারনে তার এ ব্যাপারটাতেই তার অনীহা চলে এসেছে।

আমাদের চারপাশে মেয়েদের এই ভোগান্তির দৃশ্যগুলো বড্ড চেনা। আরে!  এ আর এমন কি। এই ভেবে দিনের পর দিন আমরা এভাবেই কাটিয়ে দেই। অথচ এই সমস্যাগুলোর আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে এন্ডোমেট্রিওসিস নামের একটি মারাত্মক রোগ, সে সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৮ কোটি নারী এই এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু ধারণা না থাকার কারণে মহামারির আকার নিচ্ছে এই অসুখটি। আসুন এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারনা নিয়ে নেই।   

এন্ডোমেট্রিওসিস কি? 

জরায়ুর সবচেয়ে ভিতরের স্তরের নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ যদি জরায়ুতে সৃষ্টি না হয়ে পাশাপাশি অন্য কোন অঙ্গ যেমন ফেলোপাইন টিউব বা ডিম্বাশয়ে সৃষ্টি হয় তখন তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে। এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি অবস্থা।     

এন্ডোমেট্রিওসিস এর প্রধান লক্ষন ও উপসর্গ

  • পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে

  • তলপেটে অসম্ভব ব্যথা অনূভব করা।

  • মলমূত্র ত্যাগ করার সময় অসহনীয় ব্যথা হওয়া।

  • পেটে ব্যথা করা।

  • অসম্ভব দূর্বল অনুভূত হওয়া।

  • মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত বোধ করা। 

  • যৌন সঙ্গমের সময় কষ্ট পাওয়া 

এন্ডোমেট্রিওসিস এর প্রধান কারনগুলো কি কি? 

  • মাসিকচক্রের রক্ত শরীরের বাইরে না বেরিয়ে যদি ভিতরে ফেলোপাইন টিউব বা ডিম্বাশয়ে ফিরে যায় তাহলে সেখানে এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ জন্মাতে শুরু করে।

  • প্রজননকালীন সময়ে একজন মেয়ে কিংবা নারীর হরমোনাল তারতম্যের কারনে এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে। 

কারা ঝুকিতে আছেন? 

যেকোন বয়সের মেয়ে কিংবা নারী এন্ডোমেট্রিওসিস এ আক্রান্ত হতে পারেন। এন্ডোমেট্রিওসিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন, 

  • যারা এখন অব্দি সন্তান জন্ম দান করেন নি। 

  • হরমোনাল তারতম্য আছে যাদের। 

  • যাদের মাসিক চক্র অনিয়মিত। 

এন্ডোমেট্রিওসিস এর চিকিৎসা কি?

এন্ডোমেট্রিওসিস এ আক্রান্ত প্রায় ৫০ শতাংশ নারী পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যাত্ব বরণ করেন। এছাড়া এন্ডোমেট্রিওসিস এর কারনে, জরায়ু গহ্বরে সিস্ট তৈরী হয়। পরবর্তী সময়ে এই সিস্টগুলো অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে অপসারণ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারও এন্ডোমেট্রিওসিস এর কারনে হতে পারে। 

তাই এই লক্ষন গুলোকে এড়িয়ে না যেয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা ভীষণ জরুরি।  আপনার মেয়ে, বান্ধবী কিংবা পরিচিত যে কারোর পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে, অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। চিকিৎসক আল্ট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram) কিংবা ট্রান্সভ্যাজিনাল আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান (TVS) এর মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিওসিস শনাক্ত করতে সক্ষম হোন। 

এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিহত করতে রয়েছে বেশকিছু মুখে খাওয়ার ওষুধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে রয়েছে সিস্ট অপসারনের সুবিধাও। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ সেবনে এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কিত সকল লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


 

Default user image

ত্রপা চক্রবর্তী, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি ত্রপা চক্রবর্তী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসী তে স্নাতক সম্পন্ন করে, এখন একটি ফার্মাসিউটিক্যালসে প্রোডাকশন ফার্মাসিস্ট হিসেবে চাকরি করছি। ফার্মাসিস্ট হিসেবে মানুষের সুস্বাস্থ্যে অবদান রাখতেই আস্থা লাইফের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি।

Related Articles