এক্টোপিক বা টিউবাল প্রেগন্যান্সি মায়েদের জন্য কেন ঝুঁকিপূর্ণ
ইদানিং আশেপাশে বা পরিচিত অনেকের কাছ থেকেই শুনতে পাওয়া যায় যে, গর্ভে সন্তান কিন্তু তার কোন লক্ষণ বা কোন প্রাণ নেই! এর সম্ভাব্য একটি কারণ হতে পারে এক্টোপিক বা টিউবাল প্রেগন্যান্সি যা মায়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি কি, এর সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানব।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি কি?
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হলো জরায়ুর বাইরে অবস্থিত ভ্রুণ। যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ু বা গর্ভাশয়ের বাইরে (সাধারণত ফ্যালোপিয়ান টিউবের একটিতে) ইমপ্লান্টেড হয় তখন তাকে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলে। ফ্যালোপিয়ান টিউব হল ডিম্বাশয়ের সাথে গর্ভাশয়ের সংযোগকারী টিউব। ডিম্বাণু যদি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে আটকে যায়, তবে তা কোষ বিভাজন করে ডেভেলপ হয়ে শিশুতে পরিণত হবেনা এবং এই গর্ভাবস্থা অব্যাহত থাকলে মায়ের জীবনের ঝুঁকি থাকে।
এটি ঘটে যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে এমন একটি স্থানে ইমপ্লান্টেড হয় যা ডিম্বাণুটির বৃদ্ধিকে সহায়তা করতে না। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি প্রায়ই ফ্যালোপিয়ান টিউবে ঘটে, একে টিউবাল প্রেগন্যান্সিও বলা হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ডিম্বাশয়ে বা পেটের গহ্বরেও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ঘটতে পারে, অবশ্য এটি খুব বিরল ঘটনা। এই ধরনের প্রেগন্যান্সিতে অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হলে তা মায়ের জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে।
দুর্ভাগ্যবশত, এই অবস্থায় ভ্রুণটিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এটি সাধারণত ওষুধ বা অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করতে হয়। যুক্তরাজ্যে, প্রতি ৯০টি প্রেগ্ন্যাসির মধ্যে প্রায় ১টি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয়ে থাকে, অর্থাৎ বছরে প্রায় ১১,০০০ প্রেগন্যান্সি।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির কারণ
-
সবচেয়ে বেশি যে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি দেখা যায় তা হলো টিউবাল প্রেগন্যান্সি। এটি ঘটে যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে যাওয়ার পথে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে আটকে যায়। ফ্যালোপিয়ান টিউবে প্রদাহের কারণে টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
-
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা নিষিক্ত ডিম্বাণুর অস্বাভাবিক বিকাশও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির কারণ হতে পারে।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকিতে আছেন যারা
কিছু বিষয় আপনার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন:
১. যদি আগে কখনো এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয়ে থাকে তাহলে আবারো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
২. যৌনবাহিত প্রদাহ বা সংক্রমণকারী জীবাণু, যেমন গনোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়া, ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং আশেপাশের অঙ্গগুলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে যা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩. টিউবাল সার্জারি, অর্থাৎ বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্থ ফ্যালোপিয়ান টিউব সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সার্জারি করলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৪. কিছু গবেষণায় দেখা যায়, যে মহিলারা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা অনুরূপ চিকিৎসা করেছেন তাদের এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৫. জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (IUD) ব্যবহার করার সময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে, যদি আপনি IUD ব্যাবহার করা অবস্থায় গর্ভবতী হন, তবে এটি এক্টোপিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জন্মনিয়ন্ত্রণের আরেকটি স্থায়ী পদ্ধতি হলো টিউবাল লাইগেশন। লাইগেশন করার পরেও যদি আপনি প্রেগন্যান্ট হন, সেটাও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. বন্ধ্যাত্বের কারণেও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৭. গর্ভবতী হওয়ার ঠিক আগে আগে যদি আপনি ধূমপান করে থাকেন তাহলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়তে পারে। আপনি যত বেশি ধূমপান করবেন, ঝুঁকি বাড়বে ততো বেশি।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণ এবং সম্ভাব্য জটিলতা
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো সাধারণত প্রেগন্যান্সির ৪র্থ এবং ১২ তম সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয়। প্রথম প্রথম কোনো উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। তবে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও অনেকে স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সির উপসর্গগুলো লক্ষ্য করতে পারেন, যেমন পিরিওড মিস হওয়া, স্তনের সংবেদনশীলতা, বমি ভাব ইত্যাদি।
আপনি যদি এই অবস্থায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেন তাহলে পজিটিভ রেজাল্ট দেখাবে, যদিও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি স্বাভাবিক ভাবে কন্টিনিউ হয়না। নিষিক্ত ডিম্বাণু অনুপযুক্ত স্থানে (গর্ভাশয়ের বাইরে) বেড়ে উঠার সাথে সাথে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো আরও বাড়তে থাকে।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির প্রধান লক্ষণগুলো হলো-
যোনিপথে রক্তপাত
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে সাধারণ প্রথম লক্ষণটি হলো যোনিপথে স্বল্প রক্তপাত। প্রেগন্যান্সিতে মাঝে মাঝে ব্লিডিং হতে পারে, এটি গুরুতর কোনো ব্যাপার নয়। তবে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে এই রক্তপাত নিয়মিত পিরিয়ডের থেকে একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি প্রায়ই শুরু হয় এবং বন্ধ হয়ে যায়, রক্ত থাকে পানির মতো তরল, রঙ হতে পারে গাঢ় বাদামী।
ব্লিডিং হওয়া রক্ত কোথায় জমা হয় এবং কোন নার্ভকে ইরিটেট করে তার উপর নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো নির্ভর করে।
কাঁধের ডগা ব্যথা
এক ধরনের অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভূত হতে পারে কাঁধ এবং বাহুর সংযোগ স্থানে। এই ব্যাথার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, তবে এমন ব্যথা অনুভব করলে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ধারণা করা হয় এই ব্যথা পেলভিস বা তলপেটে রক্ত বা অন্যান্য তরলের উপস্থিতির সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এসব স্থানে স্নায়ু আছে যা কাঁধের স্নায়ুর সাথে যুক্ত। এই স্নায়ুতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কাঁধের ডগা ব্যথা হতে পারে।
পেট ব্যথা
পেটে ব্যথা হতে পারে এবং সাধারণত একপাশে ব্যথা কম থাকে। ব্যথা হঠাৎ করে হতে পারে অথবা অল্প ব্যথা থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে পারে এবং ক্রমাগত ব্যথা শুরু হতে এবং ভালো হতে পারে। যদিও প্রেগন্যান্সিতে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম দূর্বল হওয়ায় অ্যাসিডিটি, হজমে সমস্যা বা অন্যান্য কারনেও পেটে ব্যথা হতে পারে। তবে যদি ব্যথা থাকে তবে তা অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
টয়লেটে যাওয়ার সময় অস্বস্তি
টয়লেট করার সময় পেটে ব্যথা হতে পারে, এর সাথে হতে পারে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য। প্রেগন্যান্সিতে মূত্রাশয় এবং অন্ত্রের কাজে কিছু পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। এই উপসর্গ মূত্রনালীর সংক্রমণ, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম অথবা পেটের অন্যান্য সমস্যার কারনেও হতে পারে, তবে কারণ যেটাই হোক, দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
যদি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এক্টোপিক প্রেগন্যান্সিতে কখনো ভ্রুণকে বাঁচানো যায়না, এমনকি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে মাকেও বাঁচানো সম্ভব হয়না।
অনেক সময় ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণু ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে সেই টিউবটি ফেটে যেতে পারে এবং পেটের ভেতর ভারী রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। একে ফেলোপিয়ান টিউব রাপচার বলে, এটি খুব গুরুতর অবস্থা তাই এমন ঘটনা ঘটলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করতে হবে।
পেটে ধারালো, আকস্মিক এবং তীব্র ব্যথা হওয়া, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দেখতে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি রাপচারের লক্ষণ এবং এমন হলে বুঝতে হবে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রাপচার অথবা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির যেকোনো লক্ষণ, যেমন— কাঁধে ব্যাথা, তলপেটে ব্যাথা, ব্লিডিং, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং অপারেশনের ব্যাবস্থা করতে হবে।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা
প্রথমে ডাক্তার রোগ নির্ণয় করেন কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং তারপর রোগীকে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।
রোগ নির্ণয় (ডায়াগনসিস) এবং পরীক্ষা (টেস্ট)
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি সাধারণত চেকআপের সময় ডায়াগনোসিস করা হয়। ডাক্তার প্রথমে প্রেগন্যান্সি কনফার্ম করতে বেশ কয়েকটি টেস্ট দিবেন এবং তারপরে ভ্রুণের অবস্থান (এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি) আছে কিনা দেখবেন। টেস্টগুলো হলো:
ব্লাড টেস্ট
শরীরে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) হরমোনের পরিমাণ, বা serum beta-hCG জানতে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এই হরমোন প্রেগন্যান্সির সময় উৎপাদিত হয়।
আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা
এটি একটি ইমেজিং টেস্ট, অর্থাৎ, শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ছবি তৈরি করা কে আল্ট্রাসাউন্ড বলে। আল্ট্রাসাউন্ড প্রায়ই গর্ভাবস্থায় ব্যবহৃত হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি কোথায় ইমপ্লান্ট হয়েছে তা এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যায়। প্রথমে ডাক্তার ডিম্বাণু বা ভ্রুণের অবস্থান জানতে পারেন এর মাধ্যমে, তারপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহন করেন।
ইউরিন টেস্ট
এই টেস্ট করতে প্রথমে ইউরিন স্যাম্পল নেওয়া হয় এবং তারপর তা পরীক্ষা করা হয়।
যদি রোগির ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে যায়, তাহলে তাকে ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে যেতে হবে এবং অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, তাই এক্ষেত্রে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা করার মতো সময় নেই।
ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা (ট্রিটমেন্ট)
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ট্রিটমেন্টের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার ভ্রুণের বৃদ্ধি বন্ধ করতে মেথোট্রেক্সেট নামক ওষুধ ইনজেকশনের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন যা ভ্রুণটিকে মেরে ফেলে। এই পদ্ধতি টি অপারেশনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ, তবে hCG level মনিটর করার জন্য ডাক্তারের সাথে নিয়মিত ফলো-আপ প্রয়োজন।
জরুরি অবস্থায় প্রায়ই অপারেশন করা হয়ে থাকে। ফেলোপিয়ান টিউব ফেটে গেলে বা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকলে ডাক্তার ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশন করেন। পেট বড় করে কাটার পরিবর্তে কয়েকটি ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে অপারেশন করাকে ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশন বলা হয়। সার্জন ডিম্বাণু সহ পুরো ফেলোপিয়ান টিউবটিকেই অপসারণ করতে পারেন, অথবা টিউবের মধ্যে থেকে ডিম্বাণুটি সরিয়ে ফেলতে পারেন। এটি একটি ইমার্জেন্সি এবং জীবন-রক্ষাকারী ট্রিটমেন্ট।
অপারেশন পরবর্তী করণীয়
অপারেশনের পর নিম্নোলিখিত নিয়মগুলো মেনে চললে দ্রুত সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যায়-
১. অপারেশনের পর অন্তত ১ সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রাম নিন, এমনকি যদি আপনি সুস্থ বোধ করেন, তবুও এই বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
২. নিয়মিত কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করুন।
৩. সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় ধীরে ধীরে উঠুন এবং কয়েক ধাপ উঠার পর বিরতি নিন।
৪. যতদিন ডাক্তার অনুমতি না দিচ্ছেন ততোদিন ব্যায়াম ও অন্যান্য কঠোর পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। ১০ পাউন্ডের বেশি ভারি কিছু তুলবেন না যেন কাটাছেঁড়ার জায়গায় নতুনভাবে ক্ষত সৃষ্টি না হয়।
৫. যতদিন ডাক্তার নিরাপদ মনে না করেন ততোদিন সঙ্গম করা থেকে বিরত থাকুন।
৬. অপারেশনের স্থানটি হালকা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এখানে তেল, পাউডার বা লোশন ব্যবহার করবেন না। গোসল স্বাভাবিক নিয়মেই করতে পারেন।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান এবং প্রতিদিন 6 থেকে 8 গ্লাস পানি পান করুন।
৮. হাসপাতালে যেসব কফিং এবং ডিপ ব্রিদিং ব্যায়াম শিখেছেন তা নিয়মিত অনুশীলন করুন।
৯. ডাক্তারের পরামর্শমতো নিয়মিত ফলোআপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।
অপারেশনের পর আবারো বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয়
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসার পরে গর্ভধারণের চেষ্টা করার জন্য কোনো দম্পতির কতদিন অপেক্ষা করা উচিত সে সম্পর্কে তেমন কোনও গবেষণা না থাকলেও, চিকিৎসকগন পরামর্শ দেন কমপক্ষে তিন মাস বা দুটি পূর্ণ মাসিক চক্রের জন্য অপেক্ষা করতে। চিকিৎসার প্রথম সপ্তাহে যে রক্তপাত হয় তা প্রথম মাসিক নয়। এই রক্তপাত গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত হরমোন কমে যাওয়ার প্রতিক্রিয়াতে ঘটে।
এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় আপনার মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। ট্রিটমেন্টের পরে আপনার প্রথম পিরিয়ডে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্লিডিং হতে পারে এবং দ্বিতীয়টি হতে পারে স্বাভাবিক। একটি স্বাভাবিক পিরিয়ড আপনাকে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে সক্ষম হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। দুটি পিরিয়ডের জন্য অপেক্ষা করলে মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
আপনি যদি মেথোট্রেক্সেটের একটি বা দুটি ইনজেকশন নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার hCG leve ৫ mIU/mL-এর নিচে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। ডাক্তার আপনাকে ব্লাড এবং ইউরিন টেস্ট করে এই বিষয়ে জানাবেন। তারপর গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে ১২ সপ্তাহের জন্য ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। কারণ মেথোট্রেক্সেট আপনার শরীরে ফোলেটের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে যা একটি শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য প্রয়োজন।
ল্যাপারোস্কোপিক ট্রিটমেন্টের পর অভ্যন্তরীণ প্রদাহ এবং ক্ষত ভালো হওয়ার জন্যেও এই সময়টা প্রয়োজন। এছাড়াও, অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি তীব্র মানসিক অশান্তি, ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। তাই পুনরায় বাচ্চা নেওয়ার আগে রোগীর ইমোশনাল রিকোভারি হওয়া প্রয়োজন, যদিও অনেকেই এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়না।