বাচ্চাদের ওষুধ খাওয়ানোর ৯টি উপায়
বাচ্চাদের নিরাপদে ওষুধ দেওয়ার সময় অনেক বাবা-মাই একটু চাপ অনুভব করেন। কারণ অনেক সময় ওষুধে কম বা বেশি হলে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই আপনাদের কাজ সহজ করতে নিচের টিপস গুলি অবশ্যই মেনে চলুন।

শিশুর অসুস্থতা বাবা-মায়ের জন্য অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। ছোট্ট শিশু তার অসুস্থতায় যেমন খুব একটা কিছু বলতে পারে না, তেমনি তার শরীরও অসুখকে প্রতিরোধ করার জন্য পরিপূর্ণভাবে তৈরি থাকে না। ফলে সব মিলিয়ে অসুস্থতার সময় শিশুর যত্ন আর ওষুধ প্রদান পুরোটাই নির্ভর করে বাবা-মায়ের উপরে। এক্ষেত্রে খানিকটা ভুল ভবিষ্যতে শিশুর জন্য বড় ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আর তাই শিশুর অসুস্থাবস্থায় তার যত্নে ও ওষুধ প্রদানে নিচের নিয়মাবলীগুলো অবশ্যই মেনে চলুন!
১. বয়স মেনে ওষুধ প্রদান
শিশুর বয়স অনুযায়ী তার ওষুধ নির্ভর করে। তার আপনার শিশুর বয়স কত সেটার উপর ভিত্তি করে তাকে ওষুধ দিন। আর শিশুর বয়স যদি ২ মাসের কম হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তাকে কোন প্রকার ওষুধ প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে প্রথমেই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন।
২. জোর করে ওষুধ খাওয়াবেন না
আপনার ছোট্ট শিশুটি ওষুধ খেতে চাচ্ছে না? ওকে জোর করবেন না। অনেকসময় মা-বাবা শিশুর মাথা ধরে জোর করে ওষুধ গেলাতে বা মুখে পুরে দিতে চান। এক্ষেত্রে ওষুধ শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে বা আরো বাজে সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই চেষ্টা করুন শিশুকে বুঝিয়ে, শান্ত করে ওষুধ খাওয়াতে।
৩. সঠিক ওষুধ প্রদান করুন
অনেকসময় শিশুদেরকে ঘরে থাকা ওষুধ খাইয়ে দেন বাবা-মা। এমন একটি কাজ খুব সহজেই মারাত্মক কোন ফলাফল ডেকে নিয়ে আসতে পারে আপনার শিশুর জন্য। ঘরে থাকা বড়দের ওষুধ তাই ভুলেও আপনার শিশুকে প্রদান করবেন না। শিশুকে যেকোন ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন ও তার পরামর্শ নিন। ওষুধ ঠিকঠাক হলেও এর পরিমাণ না জানলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তারপরেই শিশুকে কী ওষুধ খাওয়াবেন সে সিদ্ধান্ত নিন।
৪. ওষুধের মেয়াদ দেখে কিনুন
ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার সময় ওষুধের মেতাদ ঠিকঠাক আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে তারপর কিনুন। ওষুধ সবার জন্যই অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি জিনিস। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তো বটেই। তাই ওষুধের প্যাকেট ঠিক আছে কিনা, সেটার মেয়াদ ঠিকঠাক আছে কিনা এই সবকিছু দেখে ওষুধ কিনুন। ঘরে থাকা অনেক আগের কিছু ওষুধ এখনো রয়ে গেছে দেখে সেগুলো শিশুকে খাইয়ে দিবেন না। বরং প্রথমে ওই ওষুধের মেয়াদ আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হোন এবং তারপর শিশুকে সেই ওষুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।
৫. ওষুধ খাওয়ানোর সময় মেনে চলুন
প্রত্যেকটি ওষুধ সেবনের নির্দিষ্ট সময় থাকে। তাই পরিমাণের সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে তার ওষুধ প্রদান করুন। খাবারের আগে বা পরে, খালি পেটে ইত্যাদি যে নির্দেশনাটিই প্রদান করা হোক না কেন তা মেনে চলুন। এতে করে আপনার শিশু ওষুধের সম্পূর্ণ উপকারিতা উপভোগ করতে পারবে।
৬. ওষুধ সম্পর্কে জেনে নিন
চিকিৎসক অবশ্যই সবচেয়ে ভালো জানেন। তবুও শিশুকে ওষুধ প্রদান করার আগে ওষুধের উপাদান, সেটার ব্যবহার ইত্যাদি জেনে নিন। এছাড়া ওষুধটি কীভাবে, কোথায় ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যাবে যেটাও জানুন। আপনার শিশুকে আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। তার অ্যালার্জি বা অন্য কোন সমস্যাকে বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উপাদান ওষুধে থাকলে সেটা এক্ষেত্রে খুব সহজেই এড়িয়ে চলতে পারবেন আপনি।
৭. খেলার ছলে শিশুকে ওষুধ খাওয়াবেন না
অনেকেই শিশুকে ওষুধ চকোলেট বা মজার কিছু বলে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে শিশু আপনি না থাকয়াবস্থায় মজা করেই আবার ওষুধ খেয়ে ফেলতে পারে। তাই ওষুধ অবশ্যই শিশুর নাগালে রাখবেন না এবং একই সাথে তাকে মজার ছলে খাওয়াবেন না। এমনকি চিকিৎসক কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে ওষুধ খেতে বললে তাহলেই শিশুকে খাবারে মিশিয়ে ওষুধ প্রদান করুন, অন্যথায় না।
৮. আলোর সামনে ওষুধ খাওয়ান
খেয়াল রাখুন ওষুধ খাওয়ানোর সময় ঘর যেন অন্ধকার না থাকে। অন্যথায় শিশুকে ভুলভাল ওষুধ প্রদানের সম্ভাবনা থেকে যাবে। উজ্জ্বল আলোতে শিশুকে সঠিক পরিমাণে ওষুধ প্রদান করুন।
৯. দুই ডোজ ওষুধ খাওয়াবেন না
আপনার শিশু ওষুধ খাওয়ার পর বমি করে ফেললে তাকে আবার ওষুধ না দিয়ে আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। অন্যথায় সেটি আপনার শিশুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ওষুধ শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নয়, শিশুদের জন্যও অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান যেটির ভুলভাল প্রয়োগ খুব বাজে প্রভাব রাখতে পারে শিশুর শরীরে। তাই শিশুর অসুস্থতায় তাকে ওষুধ প্রয়োগের সময় যত্নের সাথে সাথে সতর্কতাও অবলম্বন করুন।