মেডিকেশন ম্যানেজমেন্ট বলতে কি বুঝায়?

মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট কি ও এর কার্যকরী পদ্ধতিসমূহ, ডাক্তারের কাছ থেকে যেসব বিষয়গুলো অবশ্যই জেনে নিবেন

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সবারই কম বেশি ঔষধ সেবন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রবীণ বা বয়স্কদের জন্য এটা নিত্য দিনের ব্যাপার কারণ, এই সময়ে তারা নানারকম বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে থাকে। আপনি অবশ্যই খুব বিচলিত হয়ে পরবেন যখন জানতে পারবেন, আপনার বাবা, মা অথবা কোন প্রিয়জন নিয়মিত ঔষধ সেবন করছে না। দুঃখজনক হলেও যে,  CDC ( Central disease for control) এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রেসক্রাইব ঔষধ এর ৫০% রোগিরা ভুলভাবে সেবন করে থাকে। এই ভুলগুলো হল- ঔষধ সময় মত না খাওয়া, ঔষধের ডোজ মেনে না খাওয়া ও ঔষধ খাওয়ার সময়কাল মেনে না চলা।

বর্তমানে অনেক বয়স্ক মানুষ অনেক জটিল ও কঠিন রোগ নিয়ে বেঁচে আছে। আর তাদের এই বেঁচে থাকা অনেকটা ঔষধের উপর নির্ভর করছে। এই সময়ে প্রতিদিন ৮-১০ টি ঔষধ গ্রহন করা অস্বাভাবিক কোন ব্যাপার না। একটি গবেষনায় দেখা যায় ৮৭% বয়স্ক কমপক্ষে ১ টি প্রেসক্রাইব ঔষধ নিয়ে থাকেন এবং ৩৬% ৫ টি বা তার বেশি নিয়ে থাকেন। আর তাই এই রকম বিপুল সংখ্যার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট তথা ঔষধ পরিচালনা পদ্ধতি থাকাটা জরুরি।  কেননা সঠিক নিয়মে ঔষধ গ্রহণের ফলে বয়স্কদের হাসপাতালমুখি হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে লাঘব হবে। 

মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট কি

মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট হ'ল রোগী কেন্দ্রিক যত্ন যা নিরাপদ, কার্যকর ও সঠিক ঔষধ ব্যবহারের সর্বোত্তম ফলাফল নিশ্চিত করে। মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট এর মধ্যে রয়েছে ঔষধ পর্যবেক্ষণ এবং ঔষধের সমন্বয়। অর্থাৎ একজন রোগী কি ঔষধ খাবে, কখন খাবে, কয়টা খাবে, খাবার আগে না পরে, ঔষধের কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা বিরুপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে, কোন ঔষধগুলো একত্রে খাওয়া যাবে না এবং কোন ঔষধ ও খবার একসাথে খাওয়া যাবে না এই সবগুলো বিষয় মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট এর অন্তর্ভুক্ত। 

রোগী, ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্ট এর সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমে মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট এর কার্যকর সুফল পাওয়া সম্ভব। মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট এর লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার সার্বিক মান উন্নয়ন। 

মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট এর প্রভাব

উপরের পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে বিপুল সংখ্যক লোক প্রেস্ক্রাইব ঔষধ নিয়ে থাকে এবং এর ফলে এর প্রভাব তার জীবন যাত্রা, চাল-চলনে, শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আর এইটা বেশি পরিলক্ষিত হবে যখন সে ঔষধ গ্রহনে হবে অযত্নশীল। এখানে অযত্নশীল বলতে বুঝায়, যখন কোনো রোগী নিয়ম মেনে ঔষধ সেবন করে না এবং সেটা ঠিকমত চালিয়েও যান না। এর ফলে সে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয় যা আমরা নিচে আলোচনা করবো। 

  •  সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যাওয়াঃ সমস্ত ঔষধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে সেটা কাউকে প্রভাবিত করুক বা নাই করুক, তা আলাদা বিষয়। ঔষধ না খাওয়া পর্যন্ত আপনি বুঝবেন না, যে কোন জিনিসটা আপনাকে কিভাবে প্রভাবিত করছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার বেশি। কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন তন্দ্রাভাব, মাথা ঘোরা, বমিভাব এইগুলা বয়স্কদের পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলে। অনেক সময় পড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে আঘাত পায় এবং এর ফলে অনেকে মারাও যায়। একটা সমীক্ষায় দেখা যায় প্রতিদিন ৭০ জন লোক পড়ে গিয়ে মারা যায় এবং এর মধ্যে কেউ কেউ ঔষধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে পড়ে যায়। আরো একটি সমীক্ষায় দেখা যায় বয়স্কদের ১৬% হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ঔষধের বিরুপ প্রতিক্রিয়ার ফলে। 

  •  আসক্তিঃ বয়স্কদের যেহেতু অনেক ঔষধ সেবন করা লাগে তাই অনেকের এর প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। অনেক সময় এই আসক্তির কারণে রোগীর সঠিক চিকিতসা ব্যহত হয় যার ফলে আরোগ্যলাভ বিলম্বিত হয় এবং আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না।

  •  বিষন্নতা ও বিচ্ছিন্নতাঃ প্রতিটা বিষয়ই একে অপরের সাথে জড়িত। লক্ষ লক্ষ বয়স্ক লোক হতাশায় ভুগছে এর মধ্যে ঔষধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও হতাশা আসতে পারে।  এই সমস্যা গুলোর সাথে যখন স্বাস্থ্য সমস্যা একত্রিত হয়ে বিচ্ছিন্নরুপ ধারণ করে। তখন তারা নিজেদের আত্নীয় স্বজনদের কাছ থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখে।  ফলে তারা আরো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। 

আর তাই মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া সহজ ও সুন্দর করতে হবে ফলে দুশ্চিন্তা কম হবে এবং স্বাস্থ্য গত কোনো প্রভাব ফেলবে না। আসুন জেনে নেয়া যাক মেডিকেসন ম্যানেজমেন্টের কার্যকরী কিছু টিপস। 

মেডিকেসন ম্যানেজমেন্টের কার্যকরী ১১টি টিপস

আমাদের সকলকে বিশেষকরে  ৪০ বছর বয়সি বা তার বেশি বয়সী বহু লোকের প্রতিদিন নিয়মমাফিক ঔষধ খাওয়া একটি নিত্যদিনের কাজ। আর তাই এটা অবশ্যই জানা জরুরি আপনি কি ঔষধ খাচ্ছেন,  কখন সেগুলো খেতে হবে, এইগুলো আপনার দেহে কি করবে, কখন এইগুলা পুনরায় খেতে হবে এবং আরো আনুসাংগিক বিষয়সমূহ। আর তাই ঔষধ সেবন প্রক্রিয়াটি যতটা সম্ভব সহজ ও সংক্ষিপ্ত করে তোলা দরকার।

১. আপনার হোমওয়ার্কটি করুন

একাধিক প্রেসক্রিপশনে ঔষধগ্রহণকারীদের জন্য দুটি প্রশ্ন সাধারণত মনে আসবে। তা হল, এই ঔষধগুলো কেন প্রয়োজন এবং এইগুলার কাজ কি?  যখন কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলা হয়, তারা কি পরামর্শ দিচ্ছে তা ভাল করে পড়ুন এবং কি কারণে তারা ঔষধ গুলা দিচ্ছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন এবং এর ফলাফল নিয়েও জিজ্ঞাসা করুন। প্রতিটা ঔষধ এর কারণ একদম পরিষ্কার জানা থাকতে হবে। আপনি বা আপনার প্রিয়জন ঔষধটি যত ভাল বুঝবেন ততই এর সেবনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

২. ঔষধের একটি তালিকা তৈরি করুন এবং একটি সময়সূচী তৈরি করুন

আমরা যেমন জানলাম লক্ষ লক্ষ বয়স্ক লোক প্রতিদিন ৫ টির বেশি ঔষধ নেন। এমনো রয়েছে যাদের ১০ টি বা তার অধিক ঔষধ প্রতিদিন গ্রহন করতে হয় বিভিন্ন সময়ে। আর তাই শুধুমাত্র বোঝার জন্য যে একজন ব্যক্তি কি কি ঔষধ খাচ্ছে তার জন্য একটি তালিকা তৈরি করা। এর সাথে আরো কিছু যোগ করা যেতে পারে, 

  • ঔষধের নাম

  • কি জন্যে ঔষধটি ব্যবহার হচ্ছে 

  • কতক্ষন পর পর ঔষধটি খাওয়া লাগবে

  • ঔষধটি কতদিন পর রিফিল করা প্রয়োজন

  • এবং ঔষধের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া 

এই তালিকাটি আপনি সহজেই আপনি খাতায়, কম্পিউটারে অথবা মোবাইল ফোনে তৈরি করে নিতে পারেন এবং যেন প্রতিনিয়ত আপডেট করা যায়। এই ঔষধগুলি কখন গ্রহন করা দরকার সেগুলির জন্য আপনার একটি সময় সুচি তৈরি করা উচিত। আপনি অনেক ঔষধ পাবেন সেগুলো স্প্রে বা টপিকাল মলম হতে পারে তা আলাদা বক্সে রাখা যেতে পারে।

এই রকম তালিকা করে রাখলে পরবর্তীতে আপনি যখন কোনো ফার্মাসিস্ট অথবা চিকিৎসক এর কাছে যাবেন তখন তাদের জন্য সহজ হবে।

৩. কোন ঔষধ আপনি নিতে পারবেন না বা একত্রে নিতে পারবেন না

আপনি যদি আগে থেকে জানেন যে, কোন কোন ঔষধে আপনার এলার্জি আছে এবং কোন ঔষধগুলো  আপনার জন্য কাজ করে না। যখন চিকিৎসক এর সাথে কথা বলবেন তখন এই জিনিস গুলা তাকে অবগত করবেন। এমন অনেক ঔষধ আছে যেগুলো আপনি আপনার বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার কারণে নিতে পারবেন না। আপনার অবস্থা বা কি রোগ হতে পারে সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের সাথে উন্মুক্ত আলোচনা করুন।  কিছু ঔষধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার উন্নতিতে প্রভাব ফেলতে পারে অথবা অন্য ঔষধের সাথে মিলে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৪. আপনি কেমন অনুভব করছেন সে সম্পর্কে সচেতন হোন

যখন আপনি ঔষধ বেশি খাবেন তখন আপনার ঔষধগুলি থেকে বেশি প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এটি মোকাবেলায় আপনি কেমন অনুভব করছেন তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ঔষধগুলো নিম্নোক্তক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে, 

  • ওজন- কিছু ঔষধ আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে আবার কিছু ঔষধ কমাতে সাহায্য করে। 

  • ঘুমের সময়সূচি- কিছু ঔষধ আপনার স্বাভাবিক ঘুমকে ব্যহত করবে। যেমন- কিছু অ্যান্টিহিসটামিন  জাতীয় ট্যাবলেট তন্দ্রাছন্ন করে।

  • সামাজিক প্রভাব- কিছু রোগ এবং ওই রোগের ঔষধ ব্যবস্থা আপনার সামাজিক জীবনকে বিষণ্ণ করতে পারে।

  • ক্ষুধা- অনেক ঔষধ আপনাকে ক্ষুধামন্দা করতে পারে।

  • হৃদ স্পন্দন- কিছু ঔষধ খাওরার পর হৃদ স্পন্দন এর তারতম্য হতে পারে।

  • পাকস্থলী- কিভাবে খাবার হজম করছে

  • অন্যান্য অঙ্গগুলি- কিভাবে কাজ করছে

আপনি কি রকম অনুভুতি হচ্ছে এই সম্পর্কে আপনার চিকিৎসক কে জানাতে হবে। কোনো খারাপ অনুভুতি হলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফোনে চিকিৎসককে জানাতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে।

৫. নিজে নিজে ঔষধ নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকুন

আমাদের সমাজে সবচেয়ে প্রচলিত যে ব্যাপারটা তা হচ্ছে নিজে নিজে ঔষধ কিনে খাওয়া। কখনো ঔষধের দোকানদার থেকে, আত্মীয়স্বজন কিংবা আশেপাশের লোকজন থেকে শুনে নিজেরাই নিজেদের প্রেসক্রিপশন তৈরি করি। সবচেয়ে দুঃখজনক হল আমরা মারাত্মক ভুল করছি এবং নিজের ও পরিবারের লোকজনদের সর্বনাশ ডেকে আনছি সেইটা আমরা জানি না। বরং নিজেকে অনেক জ্ঞানি মনে করি আরেকজনকে ঔষধ এর পরামর্শ দিতে পারলে। 

যদি আপনার মনে হয় আপনি অসুস্থ বোধ করছেন, ঔষধ প্রয়োজন। তাহলে আপনি অবশ্যই চিকিৎসক এর সাথে পরামর্শ করে ঔষধ গ্রহন করবেন। 

৬. সম্ভব হলে সবসময় একই ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনুন 

সাধারণত রোগীরা যেখানে সাচ্ছ্যন্দবোধ করে সেখান থেকেই ঔষধ ক্রয় করে। তবে সবসময় একই ফার্মেসি থেকে ঔষধ ক্রয় করার কতোগুলা যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

আপনি যদি একই ফার্মেসি থেকে ঔষধ  ক্রয় করেন তাহলে ওই দোকানের সাথে আপনার একটি জানাশোনা তৈরি হবে। একজন নিয়মিত ক্রেতা হিসেবে দোকানদার  আপনাকে সম্মান করবে এবং সবসময় ভাল মানের ঔষধ দেওয়ার চেষ্টা করবে। আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবে এবং সে আপনাকে ঔষধ সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারে। তবে এটা খেয়াল রাখতে হবে যে ফার্মেসির সবাই কিন্তু অভিজ্ঞ না। শুধুমাত্র একজন গ্র্যাজুয়েশন ফার্মাসিস্ট ই আপনাকে ঔষধ সম্পর্কে সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য দিতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে কিছু মডেল ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েশন ফার্মাসিস্ট পাওয়া যায় যা প্রয়োজনের চেয়ে খুবই নগণ্য। তাই আপনাকে নিয়মিত ঔষধ ক্রয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফার্মেসি নির্বাচন করা উচিৎ যেখানে আপনি ভাল মানের ঔষধের পাশাপাশি সঠিক পরামর্শদাতা পাবেন।

৭. ঔষধ সম্পর্কিত আনুসাঙ্গিক যত প্রশ্ন আছে, বিশেষজ্ঞ থেকে জেনে নিন

আপনি যে ঔষধ নিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করতে ভয় পাবেন না। এটা আপনার জীবন এবং আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়। এখানে কোন সংকোচ করবেন না।

যে সকল তথ্য আপনি অবশ্যই জেনে নিবেন, 

  • আমি এই ঔষধটি কিভাবে গ্রহন করবো?

  • আমি কতবার গ্রহন করবো?

  • সম্ভাব্য প্বার্শপ্রতিক্রিয়া কি কি?

  • আমি কি খাবারের সাথে এটি গ্রহন করবো? 

  • খাবারের পর গ্রহন করবো?

  • আমি যদি ডোজ মিস করি তাহলে কি হবে?

এমন আরো অনেক প্রশ্নই আপনার মনে উদয় হতে পারে,  যাই হোক না কেন প্রশ্ন করে আপনি পরিষ্কার হয়ে নিবেন। 

৮. আপনার ঔষধগুলিকে অগোছালো করে রেখে দিবেন না

আপনার সমস্ত ঔষধগুলো একত্রে স্তূপ করে রাখা একটি ভাল ধারনা মনে হতে পারে কারণ সেইগুলি আপনাকে একসাথে একই সময়ে গ্রহন করতে সুবিধে হতে পারে। কিন্তু মাঝে আপনাকে বিভিন্ন ঔষধ বিভিন্ন দিনের  সময়ে সেবন করতে হয় তখন ভুল বশত সকালের ঔষধ খেয়ে ফেললে তা আপনার দেহের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তাই স্তূপ করে ঔষধ রাখা যাবে না।

৯. সঠিক পদ্ধতিতে ঔষধ সংরক্ষণ করতে হবে

সমস্ত ঔষধ নিরাপদ এবং শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। বেশিরভাগ লোকই উপযুক্ত পরিবেশে ঔষধ সংরক্ষণ করে না। উচ্চ তাপমাত্রা এবং স্যাতস্যাতে পরিবেশে ঔষধ রাখলে ঔষধের এর মান ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু ঔষধ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়। ঔষধ গুলা সংরক্ষন করার সময় এর লেভেলগুলা ঠিক ভাবে পড়ুন যেন তা আপনি যথাস্থানে সংরক্ষন করতে পারেন।

১০. শেষ হবার আগেই ঔষধ কিনে রাখতে হবে 

ঔষধ শেষ হলে কিনবো এই চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে একটি ডোজ সময়মত না নিতে পারলে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হতে পারে। যেমন এন্টিবায়োটিকের ব্যাবহার। সুতরাং ঔষধের সঠিক ফলাফল পেতে কোন ডোজ বাদ দেয়া যাবে না।

১১. ঔষধ নিতে ভুলে গেলে কি করতে হবে তা জেনে নিন  

আপনি ভুল বশত অথবা ঔষধ শেষ হওয়ার কারণে ঠিক সময়ে ঔষধ সেবন করতে না পারলে পরবর্তীতে কি করতে হবে সে সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিন। আপনি ডাক্তার এর সাথে কথা বলুন, আপনার কি চালিয়ে যাওয়া উচিত নাকি পরবর্তী সময়ে নিয়ে নেয়া উচিত নাকি যখনি মনে পড়বে তখনি নেয়া উচিত?

পরিশেষ

এখনকার মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি অবস্থা থেকে অনেক উন্নত। প্রক্রিয়াটির প্রতিটি অংশই এত সহজ,  কখন কিভাবে সেবন করা থেকে শুরু করে, মনে করিয়ে দেয়া পর্যন্ত করে দেয়। স্মার্ট মেডিকেসন ম্যানেজমেন্ট ডিভাইস যেমন স্মার্ট ঘড়ি, বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপলিকেশন এ কোন ঔষধ কিভাবে ও কোন সময়ে আপনি নিবেন তা আপনি সেট করে নিতে পারবেন। আপনি সেখানে  এলার্ম ও সেট করে দিতে পারবেন যা আপনাকে আপনার ঔষধ সেবন এর কথা মনে করিয়ে দিবে।  

এসব ডিভাইসের কারো আবার ভয়েস অ্যালার্ম সফটওয়্যার আছে যার ফলে আপনি সহজেই ভয়েস অ্যালার্ম এর মাধ্যমে আপনার ঔষধ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য শুনতে পারবেন। এসব ডিভাইস সহজেই আপনি আপনার ফোন বা কম্পিউটার এর সাথে যুক্ত করে নিতে পারবেন।

 

Default user image

মোঃ এহসানুল হক, সিনিয়র লেখক, আস্থা লাইফ

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঔষধ প্রকৌশল ( ফার্মেসি) বিষয়ে। এখন কর্মরত আছেন একটি নামকরা ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানির মানব সম্পদ বিভাগের প্রশিক্ষন ও উন্নয়ন শাখার জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা হিসেবে। যেহেতু কাজের ধরনই হচ্ছে ঔষুধ এবং রোগ বালাই নিয়ে প্রশিক্ষন দেয়া, স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা জাগ্রত করা। তাই এই বিষয় নিয়েই টুকিটাকি লেখালেখি করে থাকেন নিজের কাজের সুবিধার জন্যে। আর তাই যখনি শুনেছেন "আস্থা লাইফ " স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করবে, সবার মাঝে বাংলা ভাষায় সঠিক স্বাস্থ্যবার্তা পৌছে দিবে। তখনি নিজ আগ্রহে যোগ দিয়েছেন "আস্থা লাইফ" পরিবারের সাথে। কাজের পাশাপাশি তিনি পুরোদমে একজন ট্রাভেলার, একজন শিক্ষক, যে ভালোবাসে জীববিজ্ঞান নিয়া কাজ করতে এবং পড়াতে। আর তাই যুক্ত আছেন নারায়ণগঞ্জের "কিউরিয়সিটি" নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সাথে যেখানে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের বিষয়গুলা হাতে কলমে শিখানোর পাশাপাশি ভালো মনের মানুষ হিসেবে গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

Related Articles