নিরাপদে একাধিক ওষুধ সেবন করবেন যেভাবে
একাধিক ওষুধ একসাথে গ্রহণ করলে কিছু ওষুধ নিজেদের মধ্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আমাদের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিটি ওষুধ কখন এবং কীভাবে সেবন করতে হবে তা মেনে চলাও বেশ কষ্টসাধ্য। আর এই সমস্যা দূর করতেই আপনার জন্য রয়েছে একাধিক ওষুধ একসাথে খাওয়ার টিপস।
একাধিক ওষুধ একসাথে সেবন করা এখন বেশ পরিচিত ও স্বাভাবিক একটি ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বেশিরভাগ চিকিৎসকই রোগীদেরকে একত্রে একাধিক ওষুধ প্রদান করেন এবং ফলে একই মানুষকে দিনে কয়েকবার ও একইসাথে অনেকগুলো ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা একাধিক ওষুধ সবচেয়ে বেশি প্রদান করে থাকেন।
সাধারণত চিকিৎসকের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণে সমস্যা না হলেও একজন রোগী-
-
ওষুধ কতটা নিচ্ছেন?
-
কখন নিচ্ছেন?
-
কেন নিচ্ছেন?
-
কোন দিন থেকে নিচ্ছেন?
ইত্যাদি প্রশ্নগুলো রোগীর শারীরিক সুস্থতার জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ন। কারণ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেই আপনি বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
একাধিক ওষুধ সেবনের ঝুঁকিসমূহ
একাধিক ওষুধ শরীরকে সুস্থ হতে সাহায্য করলেও একত্রে অনেকগুলো ওষুধ সেবন একইসাথে যেমন ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে, তেমনি অন্যান্য ওষুধের কার্যকারিতাও কমিয়ে দিতে পারে।
যেমন, একইসাথে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টি-অ্যানজাইটির ওষুধ সেবন বা ব্লাড থিনার ও হাই ব্রাড প্রেশারের ওষুধ সেবন শরীরকে আরো বেশি দূর্বল করে দিতে পারে। ওষুধের ফলে এমন কোন সমস্যা দেখা দিলে অতিস্বত্ত্বর চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ওষুধ সংক্রান্ত পরামর্শ নিন।
একাধিক ওষুধ একত্রে সেবন করলে-
-
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়
-
খাবার বা অন্যান্য সাধারণ ওষুধ নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে
-
ওষুধের সময় ও পরিমাণ সম্পর্কে ভুলভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
-
অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
সাধারণত নিম্নোক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলা বেশী দেখা যায়-
-
যেসব রোগী ৫টির বেশি বেশি ওষুধ একত্রে সেবন করছেন
-
বৃদ্ধ নারী-পুরুষ
-
হাসপাতালে ভর্তি রোগী
-
একাধিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলছেন এমন রোগীর ক্ষেত্রে
অনেকসময় স্বাভাবিক একজন মানুষ একই মাত্রার ওষুধে খুব বেশি আক্রান্ত না হলেও বয়স ও শারীরিক অবস্থাভেদে একাধিক ওষুধ সেবনে তার মধ্যে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর তাই একাধিক ওষুধ সেবন করলেও এসময় মাথায় রাখুন নিচের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো-
প্রয়োজনীয় টিপস
এই পরামর্শগুলি আপনাকে আপনার সমস্ত ওষুধ নিরাপদে নিতে সাহায্য করতে পারে-
১. সমস্ত ওষুধের একটি তালিকা তৈরি করুন
আপনার খাওয়া সমস্ত ওষুধের একটি তালিকা রাখুন। আপনার তালিকায় সমস্ত প্রেসক্রিপশন এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ওটিসি ওষুধের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, সাপ্লিমেন্ট এবং ভেষজ ওষুধ। তালিকার একটি কপি আপনার মানিব্যাগে এবং অন্যটি বাড়িতে রাখুন।
২. ওষুধ সম্পর্কে জেনে নিন
একাধিক ওষুধ সেবন করলেও প্রতিবার চিকিৎসক নতুন কোন ওষুধ দিলেই সেই ওষুধটি কেন দেওয়া হচ্ছে এবং কী কাজ করে ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। এতে করে আপনি কোন ওষুধটি সেবন করছেন সেটা নিয়ে আপনার জানাশোনা থাকবে। একইসাথে, চিকিৎসকের সাথে কথা বলার সময় আপনি কোন কোন ওষুধ সেবন করছেন সেগুলোও ভালোভাবে তালিকা করে নিজের সাথে নিয়ে যান। তাহলে পরবর্তী ওষুধ দেওয়ার পূর্বে সিদ্ধান্ত নিতে চিকিৎসকের জন্য সহজ হবে।
৩. ওষুধের পরিমাণ ও সময় মেনে চলুন
একাধিক ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে কোনটি খাওয়ার আগে, কোনটি পরে, কোন ওষুধটি একত্রে খেতে হবে এই ব্যাপারগুলো মনে রাখুন। বর্তমানে এই ব্যাপারগুলো মনে রাখার জন্য কাস্টোমাইজড বক্স, মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি অনেক কিছুই পাওয়া যায়। চেষ্টা করুন সেগুলোর কোন একটি বেছে নিয়ে ওষুধ খাওয়ার সময়, ডোজ ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে।
৪. অন্যদের সাহায্য নিন
আপনি আপনার ওষুধ, আপনার শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো জানেন। কিন্তু তারমানে এই নয় যে আপনার কোন ভুল হতে পারে না। ওষুধ সেবনে নিশ্চিত হতে এবং পরামর্শের জন্য পরিবারের অন্য সদস্য এবং ফার্মেসির সাথে যোগাযোগ করুন।
৫. একই ফার্মেসি থেকে সবগুলো ওষুধ কিনুন
আপনি যখন একাধিক ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনবেন তখন ফার্মেসি ওষুধের কোন নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে খুব ভালো বলতে পারবে না। তাই চেষ্টা করুন একই ফার্মেসি থেকে সবগুলো ওষুধ কিনতে। এতে করে অনেক ওষুধের বিষাক্ততার ব্যাপারে ফার্মেসিও পরামর্শ দিতে পারবে।
৬. ওষুধের সাইড ইফেক্ট হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন
আপনি যদি মনে করেন যে ওষুধ খাওয়ার পর আপনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে তবে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খাবেন।
একাধিক ওষুধ সেবন ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে না জেনে বা ভুলভালভাবে একাধিক ওষুধ সেবন করলে সেটি আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক সমস্যার কারণ তৈরি করতে পারে। তাই চেষ্টা করুন একাধিক ওষুধ একসাথে সেবনের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে, সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে।