ওষুধের সাথে যেসব খাবার মোটেও খাবেন না!
ওষুধ কখন খাব? খাবারের আগে না পরে? কোন ওষুধ চলাকালীন কোন খাবার খাওয়া যাবে না? ড্রাগ ফুড ইন্টারেকশন কিভাবে হয়? এটি কি বিপজ্জনক? ড্রাগ ফুড ইন্টারেকশন এড়িয়ে চলব কিভাবে?
" ফল খেয়ে জল খায়
যম বলে আয় আয় "
--- খনার বচন
খনা, প্রাচীন ভারতীয় এই নারী সুপরিচিত ছিলেন তার অসামান্য কিছু ছড়ার জন্য। তার রচিত সবগুলি ছড়াই ছিল অব্যর্থ। এমনকি এই একবিংশ শতকেও সেগুলো সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। যেমন উপরে বর্ণিত এই ছড়া অনুযায়ী ফল খাবার পর পানি খাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যদিও ফল এবং জল অর্থাৎ পানি এই দুটোই শরীরের জন্য খুব খুব দরকারি, তবুও এই দুটো একসাথে খেলে অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
একই কথা খাটে বেশ কিছু ওষুধ এবং খাবারের ক্ষেত্রে। আলাদা আলাদা ভাবে খেলে তারা আমাদের শরীরের কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু একসাথে খেলে মিথষ্ক্রিয়ার কারণে আমাদের শরীরে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ কিছু ওষুধের সাথে বিশেষ কিছু খাবারের এই মিথষ্ক্রিয়াকে 'ড্রাগ ফুড ইন্টারেকশন' বলা হয়।
ড্রাগ ফুড ইন্টারেকশন কিভাবে হয়?
যখন কোন খাবার খেলে ওষুধ সেবন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধাগ্রস্ত হয় তখন সেটাকেই বলে ওষুধ ফুড ইন্টারেকশন। অর্থাৎ যখন আপনার খাদ্য এবং ওষুধ একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ করে তখনই ওষুধ-খাদ্য মিথস্ক্রিয়া ঘটে। প্রেসক্রিপশন এবং ওভার-দ্য কাউন্টার (ওটিসি) উভয় প্রকার ওষুধের সাথে খাবারের মিথস্ক্রিয়া ঘটতে পারে। এর মধ্যে অ্যান্টাসিড, ভিটামিন, আয়রন ট্যাবলেট, ভেষজ ওষুধ, বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক এবং পানীয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সমস্ত ওষুধই খাবার দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কিছু হয়, তবে তা নির্ভর করে আপনি কি খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন। আপনি খাওয়ার সাথে সাথেই একটি ওষুধ সেবন করার কারণে আপনার শরীর ওষুধটিকে ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। অথবা নির্দিষ্ট কিছু খাবার ওষুধের শোষণকে বিলম্ব করে দেয়। এ কারণেই কিছু ওষুধ খালি পেটে গ্রহণ করা উচিত (খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে বা খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে)।
কিছু ওষুধ নির্দিষ্ট ধরণের খাবারের সাথে নেওয়া যায় না। খাবারটি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যা ওষুধের গুণাগুণকে পরিবর্তন করে দেয়। যার ফলে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, কিছু ওষুধ খাবারের সাথেই গ্রহণ করতে হয়। আপনি যদি এগুলি খাবারের সাথে না নেন তবে আপনার বমিভাব বা মাথা ঘুরাতে পারে। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
তাই, ওষুধ খাওয়ার আগে বা পরে খাওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশের জন্য আপনার ডাক্তার বা অভিজ্ঞ "এ" গ্রেড ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করতে ভুলবেন না।
ড্রাগ ফুড ইন্টারেকশন এর কিছু বাস্তব উদাহরণ
বিভিন্ন ওষুধ এবং খাবারের মধ্যকার ইন্টারেকশন ভালোভাবে বোঝা যায় কতগুলি বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে।
অ্যান্টিবায়োটিক এবং দুগ্ধজাতীয় পণ্য
দুধকে বলা হয় আদর্শ খাদ্য। দুধ এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই, পনির, মাখন এগুলো সবই পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত। তবে কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স চলাকালীন সময়ে আমাদের দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। যেমন টেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন এবং সিপ্রোফ্লক্সাসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলি।
দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের দাঁত ও হাড়ের মজবুত গঠনের জন্য কাজে লাগে। এই অ্যান্টিবায়োটিক গুলি দুধের ক্যালসিয়ামের সাথে যুক্ত হয় এবং পাকস্থলীতে একটি অদ্রবণীয় এবং শোষণের অনুপযোগী পদার্থে পরিণত হয়।
সমস্যা এড়াতে খাবারের এক ঘন্টা বা দুই ঘন্টা আগে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ খুব ভালো একটি উপায় হতে পারে
তবে সমস্ত অ্যান্টিবায়োটিক এর ক্ষেত্রে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার এড়ানো দরকার নেই। উদাহরণস্বরূপ পেট খারাপ হওয়া রোধ করতে মেট্রোনিডাজল (ফ্ল্যাজিল, অ্যামোডিস, ফিলমেট ইত্যাদি) পানি বা দুধের সাথে নেওয়া উচিত।
ওয়ারফারিন এবং ভিটামিন-কে (K)
ওয়ারফেরিন একটি এন্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধ। সহজ বাংলায় বলতে গেলে এই ওষুধ রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে। থ্রম্বোএমবলিজম, স্ট্রোক প্রতিরোধ এইসব ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে ভিটামিন-কে ক্লটিং ফ্যাক্টর তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরের ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ করতে এই ক্লটিং ফ্যাক্টর কাজ করে। অর্থাৎ ভিটামিন-কে এর কাজ ওয়ারফেরিনের বিপরীতধর্মী।
তাই ওয়ারফেরিন সেবন করার সময় ভিটামিন-কে যুক্ত খাবার কম খেতে হবে। পালং শাক, বাঁধাকপি, শালগম এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
সিপ্রোফ্লক্সাসিন, থিওফাইলিন এবং ক্যাফেইন
অনেকগুলি সাধারণ ওষুধ ক্যাফেইন এর বিপাকে হস্তক্ষেপ করে, ফলে রক্তে ক্যাফেইন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই ওষুধগুলির সাথে একত্রে গভীর রাতে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়ার ফলে আপনার নিদ্রাহীন রাত কাটাতে হতে পারে। এছাড়াও এটি ক্যাফেইন এর মূত্রবর্ধক প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। সিপ্রোফ্লক্সাসিন (এক ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক) ক্যাফেইন এর বিপাককে বাধা দেয়, ফলে ক্যাফেইন এর প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
বিপরীতভাবে, ক্যাফেইন থিওফাইলিনের (এক ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক) বিপাককে বাধা দেয় এবং রক্তরসে থিওফাইলিনের ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টদের থিওফাইলিন গ্রহণকারী রোগীদের সতর্ক করতে হবে যে, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় রোগীদের অনিদ্রা এবং কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়ার কারণ হতে পারে।
স্ট্যাটিন এবং বাতাবিলেবু বা জাম্বুরা
টক ঝাল বাতাবিলেবু মাখা খেতে কার না ভালো লাগে ! প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই ফল অনেক জায়গায় জাম্বুরা, শরবতিলেবু বা মুসুম্বিলেবু নামেও পরিচিত। তবে যদি আপনি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ স্ট্যাটিন ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে এই ফলের রস আপনি খেতে পারবেন না।
রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। অতিরিক্ত পরিমাণ বাতাবিলেবুর রস সাইটোক্রোম পি-৪৫০ (P-450) এনজাইমকে প্রতিহত করে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে স্ট্যাটিন শোষিত হয়। এতে করে স্ট্যাটিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে মাসল টক্সিসিটি (মাংসপেশির বিষক্রিয়া)। এছাড়া মাংসপেশিতে ব্যথাসহ পেশির নানা রকম অসুখের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং জাম্বুরা
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য যারা “ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার”নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রেও বাতাবিলেবুর রস খাওয়া ঠিক হবে না।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য নানা ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। “ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার” তার মধ্যে অন্যতম। বাতাবিলেবু ফলের রস ওষুধের জৈবিক ভাঙন প্রক্রিয়া পাল্টে দেয় এবং রক্তে ওষুধের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।
ইনসুলিন, ওরাল ডায়াবেটিক ওষুধ এবং অ্যালকোহল
মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের পঞ্চাশোর্ধ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ এখন এই রোগে আক্রান্ত। এই রোগের ওষুধ হিসেবে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয় যা অ্যালকোহলের প্রভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
আমাদের দেশে মধ্যবিত্তের ঘরে মদের চল না থাকলেও বিত্তবান এবং অতি দরিদ্রদের মধ্যে অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস আছে। অ্যালকোহল এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় ইনসুলিনের কার্যকাল বাড়িয়ে দেয়। শুধু ইনসুলিন না, মুখে খাবার যেসব ওষুধ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দেয়া হয় তার কার্যকালও বেড়ে যায়। তখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে স্নায়বিক দৌর্বল্য, অতিরিক্ত ঘাম, কাঁপুনি, বুক ধড়ফড় করা, অস্বাভাবিক ক্ষুধা, বিভ্রান্তি এমনকি কোমা পর্যন্ত হতে পারে।
এক্ষেত্রে অ্যালকোহল বা মদ এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ এবং আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার
হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে এন্টি থাইরয়েড ওষুধ দেয়া হয়। আয়োডিন হচ্ছে থাইরয়েড হরমোনের কাঁচামাল। এন্টি থাইরয়েড ওষুধ আমাদের পাকস্থলীতে আয়োডিন শোষণে বাধা দেয়। ফলে দেহে থাইরয়েড হরমোন কম পরিমাণে তৈরি হয়।
বিভিন্ন ধরনের সি-ফুড বা সামুদ্রিক খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য প্রাণী, সামুদ্রিক শ্যাওলা, নানা ধরনের হার্ব এমনকি সামুদ্রিক লবণও। খাদ্য তালিকায় যদি প্রচুর পরিমাণে আয়োডিনযুক্ত খাবার থাকে, তাহলে সেই অনুযায়ী এন্টি থাইরয়েড ওষুধের পরিমাণও বাড়াতে হবে। ফলাফল? পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই এন্টি থাইরয়েড ওষুধ চলাকালীন সময়ে আয়োডিন যুক্ত খাবার কম খেতে হবে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রোপ্রানলল
প্রোপ্রানলল হচ্ছে এক ধরণের বিটা ব্লকার যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি বিভিন্ন ওষুধের শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে। উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন খাবারের সাথে প্রোপ্রানলল গ্রহণ করলে রক্তে প্রোপ্রানলল এর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ফলে ব্রাডিকার্ডিয়া, হাইপোটেনশন এবং ব্রোঙ্কো কনস্ট্রিকশন এর মত বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ডিগক্সিন এবং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার
খাবারের সাথে ইন্টারেকশন হতে পারে এমন আরেকটি ওষুধ হল ডিগক্সিন। এই ওষুধ হার্ট রেট কমাতে, হৃৎপেশির সংকোচন নিয়ন্ত্রণে এবং শরীরের টিস্যু থেকে তরল নির্গমনে ভূমিকা রাখে। আঁশযুক্ত খাবার এক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে হবে। এটি ওষুধের শোষণ কমিয়ে দেয় ফলে কার্যকারিতা কমে যায়। এজন্য খাবার এক ঘন্টা আগে অথবা দুই ঘন্টা পরে ডিগক্সিন খাওয়া যেতে পারে।
অ্যাসিটামিনোফেন এবং অ্যালকোহল
অল্পস্বল্প ব্যথা কমাতে আমরা প্রায়ই অ্যাসিটামেনোফেন ব্যবহার করি। এটি একটি ওটিসি (OTC) ওষুধ। অর্থাৎ ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ। প্রেসক্রিপ়্শন ছাড়াই এই ওষুধ আপনি কিনতে পারবেন। প্রেসক্রিপ়্শন লাগে না বলে এই ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়।
অনেকেই যেটা জানেন না তা হল, অ্যাসিটামেনোফেন আর অ্যালকোহল একত্রে লিভারের বিষক্রিয়া ঘটায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই হার আরো বেশি।
মনোএমাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর এবং টাইরামিন যুক্ত খাবার
মনোএমাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর এক ধরনের এন্টি ডিপ্রেসেন্ট পিল অর্থাৎ আপনার বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। এই ওষুধ টাইরামিন যুক্ত খাবারের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে।
রেড ওয়াইন, মল্ট বিয়ার, চকলেট, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ব্লু চীজ, ড্রাই ফ্রুটস, ধোয়ায় রান্না হওয়া খাবার যেমন স্মোকড ফিস, সসেজ এসবে প্রচুর পরিমাণে টাইরামিন থাকে। এসব খাবারের সাথে যদি মনোএমাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর যুক্ত হয় তাহলে আকস্মিকভাবে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
ড্রাগ ফুড ইন্টারেকশন এড়িয়ে চলব কিভাবে?
খাবার ও ওষুধের মধ্যকার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মিথষ্ক্রিয়া রোধ করার জন্য আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
-
আপনি বর্তমানে কি কি ওষুধ খাচ্ছেন, হতে পারে সেটা প্রেসক্রাইবড ওষুধ অথবা হতে পারে ওটিসি ওষুধ, প্রেসক্রিপশন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারকে সে সম্বন্ধে বিস্তারিত জানাতে ভুলবেন না।
-
প্রেসক্রিপশন নেবার সময় প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে ডাক্তারের কাছ থেকে সবকিছু জেনে নিন। যদি কোন খাদ্য কিংবা পানীয় এড়িয়ে যাবার দরকার হয় সেটাও ভালো করে বুঝে নিন। কোন বিশেষ খাবারের প্রতি যদি আপনার এলার্জি থাকে তাহলে সেটাও জানাতে ভুলবেন না যেন।
-
ওষুধ সম্পর্কে যে কোন তথ্য আপনি অভিজ্ঞ “এ গ্রেড” ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন; ওষুধটি কিভাবে খাবেন, কখন খাবেন, কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা, খালি পেটে নাকি ভরা পেটে, ওষুধের সাথে কোন খাবার এড়ানো দরকার আছে কিনা ইত্যাদি
-
ওষুধের প্যাকেটে থাকা নির্দেশিকা ভালো মত পড়ুন। অনেক সময়ই এতে প্রয়োজনীয় ছোটখাটো তথ্য থাকে যা পরবর্তীতে কাজে লাগে। কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে ফার্মাসিস্টের কাছে জেনে নিতে পারেন।
-
নির্দেশিকায় থাকা নির্দেশনা, সতর্কবার্তা মেনে চলুন।
-
ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ট্যাবলেট গুড়ো করে কিংবা ক্যাপসুল ভেঙে খাওয়া যাবে না। আমাদের দেশে বিশেষ করে বাচ্চাদের ওষুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এমনটা করা হয় ফলে ওষুধের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
-
ভিটামিন ফাইল কিংবা ক্যালসিয়াম, জিংক এসব মিনারেলস খাবার ক্ষেত্রে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী অথবা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিন। হুটহাট ভিটামিন ফাইল কিনে এনে খাওয়াটা কোন কাজের কথা নয়।
-
ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ওষুধের ব্যাপারে সচেতন হোন। নাপা, এন্টাসিড, রেনিটিডিন, সিভিট, হিস্টাসিন ইত্যাদি কিনতে প্রেসক্রিপশনের দরকার পড়ে না। কিন্তু এগুলো খাওয়ার আগেও সম্ভব হলে স্বাস্থ্য কর্মীর পরামর্শ নেয়া উচিত।
-
ওষুধ সব সময় এক গ্লাস ঠান্ডা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে খাওয়া উচিত। গরম পানীয় যেমন চা, কফির উচ্চ তাপমাত্রা ওষুধের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
-
চা কফির ও অ্যালকোহল জাতীয় কোন পানীয় এর সাথেও ওষুধ খাওয়া যাবে না।
-
চেষ্টা করুন যেন সকল ওষুধ একই ফার্মেসি থেকে কেনা যায়।
-
সমস্ত ওষুধগুলি তাদের মূল পাত্রে রাখুন যাতে সেগুলি সহজেই সনাক্ত করা যায়।
-
আপনার নতুন পুরাতন সকল প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট, ওষুধ কেনার রশিদ সংরক্ষণ করুন।
যদিও সব ওষুধ খাবারের কারণে প্রভাবিত হয় না। তবে অনেক ওষুধের কার্যক্ষমতা খাবারের ধরণ এবং সেটা কখন খাওয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। কোন ওষুধ ভরা পেটে খেতে হয়, কোন ওষুধ খাবার আধাঘণ্টা আগে, কোনটা আবার খাবার একঘণ্টা পরে খাবার নিয়ম। আবার খাওয়ার মাঝপথে খেতে হবে এমন ওষুধও রয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীর দায়িত্ব হল কোন ওষুধের সাথে কোন খাবারটা খাওয়া যাবে না, কোন সময় খেতে হবে সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া। এবং রোগীর দায়িত্ব হল প্রতিটা ওষুধ কখন খেতে হবে, কেন খেতে হবে এবং কোন বিশেষ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে কিনা এই সম্পর্কে প্রশ্ন করে জেনে নেয়া। আপনার জানামতে যেটা স্বাস্থ্যকর খাবার, সেটাই হয়ত আপনার ওষুধপত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। তাই ওষুধ খাবার সময় নিজের খাদ্যতালিকা সম্পর্কে সচেতন হোন এবং প্রয়োজন অনুসারে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন।