যে ৮টি কারণে আপনার সন্তানকে জাদুঘরে ঘুরতে নিয়ে যাবেন
শিশুদের বেড়ে উঠার সময়টাতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান কিংবা জাদুঘরে ঘোরাঘুরি করালে তা তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে একজন সুস্থ, স্বাভাবিক এবং দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আপনার সন্তানকে বিভিন্ন যাদুঘরে ঘুরাতে নিয়ে যেতে পারেন।
শিশুরা স্বভাবতই কল্পনা প্রবণ। তারা জগৎ সম্পর্কে যতটুকু ধারণা পায়, তার উপর নির্ভর করেই তাদের জ্ঞান ও সৃজনশীলতার গুণাবলি গড়ে ওঠে। সেই সাথে পড়ালেখার একঘেয়েমি ও রুটিন-মাফিক জীবন থেকে বেরিয়ে, সময় সময় বিভিন্ন শিক্ষামূলক স্থান ঘুরে আসলে শিশুর মনোবিকাশ ও পারিবারিক বন্ধন যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি স্মৃতির পাতায় যোগ হতে পারে একটি সুন্দর দিন। আর জাদুঘর হতে পারে শিশুদের বেড়াতে যাওয়ার উৎকৃষ্ট স্থান।
জাদুঘর ও অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান একটি দেশ ও জাতীর ইতিহাস ঐতিহ্য, শিল্প ও অতীতকে যতটা সুস্পষ্ট ও প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করে, অতীত ও জাতিগত প্রকৃতি জানার জন্য এর চেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম আর নেই।
চলুন শিশুকে জাদুঘর ঘোরানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়
আপনার বাচ্চাদের সৃজনশীলতা বিকাশে তাদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে কিংবা জাদুঘরে ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন। কেননা আমাদের অতীতের ঐতিহ্য জানলে শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি এতে তাদের মনোজগতেও আলোড়ন ঘটবে, ফলে তারা অনেক বেশী ক্রিয়েটিভ হয়ে গড়ে উঠবে। এছাড়াও বাচ্চাকে ঐতিহাসিক স্থানের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যমূলক ঘটনা বহুল কাহিনীগুলো জানালে এবং স্বচক্ষে তা দেখালে, তা তার শিশু মনে দাগ কাটবে। আর এর ফলে শিশুদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তারও বিকাশ ঘটবে।
২. শারীরিক সুস্থতার জন্য
এই ইট-কাঠের বন্দী নগরীতে একঘেয়ে জীবনে প্রায় সবারই অস্বস্তি কাজ করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে বাকী জীবনে। তাই, আপনার এবং পরিবারের সবারই শারীরিক ভাবে ভালো থাকতে একটু ঘোরাঘুরি করা উচিত। সেক্ষেত্রে জাদুঘরগুলোতে বেড়াতে গেলে যেমন নির্মল বিনোদনের স্বাদ পাবেন, তেমনি এতে শারীরিক ভাবেও ভালো থাকবেন। এমনকি জাদুঘরের খোলামেলা জায়গায় শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে এবং এতে তারা শারীরিক ভাবেও উপকৃত হবে।
৩. মানসিক সুস্থতার জন্য
জাদুঘরে ঘোরাঘুরি করলে তা আপনার সন্তানকে মানসিক ভাবেও ভালো রাখবে। ফাঙ্কোফোন অ্যাসোসিয়েশন অব ডক্টরস ইন কানাডা (এমএফডিসি) এবং মন্ট্রিল মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস (এমএমএফএ) এর যৌথ গবেষণায় মানসিক সুস্থতায় জাদুঘরের উপকারীতা প্রমাণিত হয়েছে। মন্ট্রিল মিউজিয়ামে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষ তার প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বিনামূল্যে জাদুঘর ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এমএফডিসির প্রধান নিকোল পেরেন্ট বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিল্পকলা এবং প্রত্নতত্ত্বের উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাইতো অনেক চিকিৎসক বিকল্প-ধারার এই নিরাময় পদ্ধতির ব্যাপারে অনেকটাই আগ্রহী।
৪. পরিবারের বন্ধন সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে
এই আবদ্ধ নগরীতে সবাই ব্যস্ত জীবনযাপন করে। আর তাইতো পরিবারের সাথে তেমন সময় কাটানো হয় না। সেক্ষেত্রে ছুটির দিনে ফ্যামিলির সবাইকে নিয়ে জাদুঘরে ঘোরাঘুরি করলে, একসাথে সময় কাটালে, তা পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে। এছাড়াও জাদুঘরে ঘুরে বেড়ালে বাচ্চাদের মন-মেজাজ ভালো থাকে। এমনকি এতে তাদের মধ্যে পজিটিভ মন-মানসিকতাও গড়ে উঠে।
৫. নিজস্ব ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জানতে সাহায্য করে
আমাদের দেশের কৃষ্টি কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে জাদুঘরগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর তাইতো আমাদের শেকড়ের কথা, ঐতিহাসিক বিষয়গুলো জানতে এবং বুঝতে জাদুঘর ভ্রমণ করা উচিত। আর শিশুদের কোমল মনে এইসব বিষয় ভালোভাবে রেখাপাত করে। সেজন্য আপনার ছোট্ট সোনামণিদের নিজস্ব ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জানাতে মাঝে মধ্যে জাদুঘরগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন।
৬. হতাশা ও ক্লান্তি দূর করে
সাধারণত মানুষের হতাশা এবং ক্লান্তি দূর করতে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করলে অনেক উপকার হয়। অনেকসময় ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিতে পারে, আর সেক্ষেত্রে তাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে জাদুঘরে বেড়াতে যাওয়া উচিত। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, মানুষের কাজকর্মের ক্লান্তি এবং ডিপ্রেশন দূর করতে ঘোরাঘুরি খুব উপকারী প্রভাব ফেলে।
৭. মেধাশক্তি এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে
ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ করলে তা শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকটা হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়। ধরুন বাচ্চা যখন বইয়ের পাতায়, পেপারে কিংবা টিভিতে ময়নামতি কিংবা মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের কথা জানবে। সেক্ষেত্রে তখন সে যদি তা স্বচক্ষে দেখতে পারে, তবে তার মেধাশক্তি এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। আর তাইতো আপনার সন্তানের সঠিক বিকাশে জাদুঘরগুলোতে বেড়াতে যাওয়া উচিত।
৮. ইন্টারনেট আসক্তি কমাতে
আমাদের আধুনিক জীবনযাপনে আমরা স্মার্ট-ফোন, কম্পিউটার, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির উপর বেশ নির্ভরশীল। আর এর প্রভাব শিশুদের উপরও পড়ছে, ফলে তারাও ইন্টারনেট নির্ভর বন্দী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি বিভিন্ন জাদুঘর এবং ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণে বের হই, তাহলে এই সমস্ত জিনিস ছাড়াও যে জীবন চলে, তা বাচ্চারা বুঝতে ও শিখতে পারবে। আর এতে তাদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সঠিক বিকাশ ঘটবে!
পরিশেষ
আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর তাইতো বাচ্চাদের সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অনেক বেশি খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার সন্তানের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের পথটা সাবলীল করতে, তাকে নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান এবং জাদুঘরে ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন। এতে যেমন শিশুর কল্পনার জগতের পরিধি বাড়বে, সেই সাথে খুলে যাবে মনন ও সৃজনশীলতার দুয়ার।
